মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

# ৯ লক্ষের বেশি শিশুকে টিকা দেওয়া হবে
# রেজিষ্ট্রেশন এখনো টার্গেটের ৭০ শতাংশ
# রেজিষ্ট্রেশন চলমান থাকবে : সিভিল সার্জন
# রোহিঙ্গাদের পৃথক কর্মসূচীতে টিকা দেওয়া হবে
# টাইফয়েডে শিশু মৃত্যুর হার ৬৮ শতাংশ
# রেজিষ্ট্রেশন চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে কক্সবাজারের অবস্থান দ্বিতীয়
# গুজব ও অপপ্রচার রোধে গণমাধ্যমকে ভূমিকা রাখার আহবান
# সদর, রামু ও কক্সবাজার পৌরসভায় রেজিষ্ট্রেশনের হার সর্বনিম্ম

কক্সবাজার জেলায় ৯ লক্ষ ৬ হাজার ৫৫৪ জন শিশুকে বিনামূল্যে টাইফয়েড ঠিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তারমধ্যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিশুর সংখ্যা ৬ লক্ষ ১২ হাজার ৯২২ জন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বহির্ভূত শিশুর সংখ্যা ২ লক্ষ ৯৩ হাজার ৬৩২ জন। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে টাইফয়েড ঠিকাদান ক্যাম্পেইন বিষয়ক মিডিয়া পারসনদের সাথে এক কনসালটেশন ওয়ার্কশপে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

ইউনিসেফের সহযোগিতায় জেলা তথ্য অফিসের উদ্যোগে আয়োজিত উক্ত কনসালটেশন ওয়ার্কশপে সভাপতির বক্তব্যে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: আ: মান্নান বলেন, টাইফয়েড টিকা অত্যন্ত নিরাপদ ও কার্যকর। সরকারের টাইফয়েড ঠিকাদান ক্যাম্পেইন শুধু শিশুদের জীবন রক্ষা নয়, দীর্ঘমেয়াদে টাইফয়েডজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যুহার কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তরুণ প্রজম্মকে সুস্থ ও সবল রেখে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ বিনির্মানে সহায়ক হবে। তাই শিশুদের টাইফয়েড টিকা দেওয়া খুবই অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসক মো: আ: মান্নান আরো বলেন, জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোন কাজ সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সফল করতে হয়। তাই গণমাধ্যম কর্মীদের টাইফয়েড টিকা বিষয়ে অভিবাবক, শিক্ষক, মসজিদের খতিব, ইমাম, সমাজের বিভিন্ন স্থরের মানুষ সহ সর্বস্থরে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে হবে। টাইফয়েড টিকা প্রদানে সকল প্রকার গুজব ও অপপ্রচার প্রতিরোধে সংবাদ কর্মীদের এগিয়ে আসতে হবে। শিশুদের টাইফয়েড ঠিকা দেওয়ার গুরুত্ব ও অপরিহার্যতা গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ সর্বস্থরে তুলে ধরার জন্য তিনি সংবাদকর্মীদের প্রতি আহবান জানান। যাতে কক্সবাজারের ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কমবয়সী শতভাগ শিশুকে টাইফয়েড ঠিকার আওতায় আনা যায়।

কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদুল হক বলেন, আগামী রোববার ১২ অক্টোবর থেকে সারাদেশে মতো কক্সবাজারেও রেজিষ্ট্রেশন করা শিশুদের টাইফয়েড ঠিকা দেওয়া শুরু হবে। তিনি আরো জানান, জেলায় মোট টিকাদান কেন্দ্র রয়েছে ২ হাজার ৯ শত ৩৬ টি। তারমধ্যে, স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র ১০টি, অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্র ১ হাজার ৭২৮টি, অতিরিক্ত টিকাদান কেন্দ্র ১৮টি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টিকাদান কেন্দ্র এক হাজার ১৮০টি। টাইফয়েড টিকাদান কার্যক্রমে জেলায় ৩০১ জন স্বাস্থ্য সহকারী, এক হাজার ৮০জন স্বেচ্ছাসেবক, প্রথম সারির তত্বাবধায়ক ৬৫ জন, দ্বিতীয় সারির তত্বাবধায়ক ২৩ জন এবং ৯ টি এইএফআই টিম কাজ করছে। সিভিল সার্জন বলেন, অপপ্রচার ও গুজব সৃষ্টিকারীদের সনাক্ত করে প্রয়োজনে আইনের আওতায় আনা হবে।

ওয়ার্কশপে জানানো হয়, কক্সবাজারের শরনার্থী ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য পৃথক ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে আগামী ২ নভেম্বর থেকে সেখানে টাইফয়েড টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

গত ৮ অক্টোবর পর্যন্ত জেলায় লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৭০% ভাগ শিশু টাইফয়েড টিকা দেওয়ার রেজিষ্ট্রেশন করেছে। এরমধ্যে, কক্সবাজার সদর, রামু ও কক্সবাজার পৌরসভায় রেজিষ্ট্রেশনের হার খুবই হতাশাব্যাঞ্জক। তবে রেজিষ্ট্রেশন চলমান থাকবে এবং শতভাগ শিশুকে টাইফয়েড টিকার আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট সকলে নিরলসভাবে কাজ করছে বলে ওয়ার্কশপে জানানো হয়। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে কক্সবাজার জেলার রেজিষ্ট্রেশনের হার দ্বিতীয় এবং সারা দেশে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে বলে তথ্য প্রকাশ করা হয়।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইমরান হোসাইন সজীব এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ওয়ার্কশপে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, জেলা তথ্য অফিসার মোঃ আবদুস সাত্তার, অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহবুবর রহমান, ইউনিসেফের কর্মকর্তা আতাউল গনি ওসমানী, সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. কনীনিকা দস্তিদার, সমাজ সেবা অফিসের ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালক শফি উদ্দিন প্রমুখ। ওয়ার্কশপে সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. মোয়াজ এর তত্বাবধানে টাইফয়েড টিকা ক্যাম্পইনের উপর একটি বিস্তারিত পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করা হয়।

ওয়ার্কশপে অন্যান্যের মধ্যে, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শাহিদুল আলম, জেলা সহকারী তথ্য অফিসার মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি জাহিদুল ইসলাম সহ গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নেন।

ওয়ার্কশপে এক সমীক্ষার উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্তের হার বাংলাদেশে অনেক বেশি। সমীক্ষা মতে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে ৪ লক্ষ ৭৮ হাজার লোক টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হন। তারমধ্যে, ৮ হাজার জন মৃত্যুবরন করে। এরমধ্যে ৬৮ শতাংশ শিশু।